সিনেমা না করার সিদ্ধান্তে শুরু হয় অমানবিক অত্যাচার -চিত্র নায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপির মুখের কথা গুলো শুনলে আপনার জীবন পাল্টে যাবে।

সিনেমা না করার সিদ্ধান্তে শুরু হয় অমানবিক অত্যাচার -চিত্র নায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপির মুখের কথা গুলো শুনলে আপনার জীবন পাল্টে যাবে।



নাজনিন আক্তার হ্যাপি।  যেকিনা চিত্র নায়িকা। সম্প্রতি ক্রিকেট খেলোয়াড় রুবেল কে নিয়ে আলোড়িত হয়েছিলেন  এই নায়িকা।ধর্ষনের অভিযোগে রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা ও করেছিলেন এই নায়িকা। তার পর মামলা টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।অবশ্যে প্রমানের অভাবে তা মাঝপথে থমকে যায়।তারপর ও মিডিয়া,সিনেমা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন নাজনিন আক্তার হ্যাপি।হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে যান হ্যাপি। নাম  বদলে হয়ে যান আমাতুল্ল্যাহ।অর্থাৎ ‘আল্লাহর বান্দী’।হ্যাপি বলেন  একদিন রাতে  ইউটিউবের একটি   ইসলামিক  ভিডিও আামার জীবন পাল্টে দেয়।  ‘একটি ইসলামি ভিডিও’র লিঙ্ক এলো। কেউ কোনো একটা ভালো কাজ করেছে, তার উপর ভিডিও করে কেউ ছেড়ে দিয়েছে।... আমি যখন ওই ভিডিও দেখছিলাম তখন মনে হলো উপর থেকে কেউ আমাকে ইসলামে আসতে উদ্বুদ্ধ করছে। আমি কৌতূহল নিয়ে ভিডিওটা দেখলাম। তবে সেখানে তেমন কিছু ছিল না। ওই ভিডিওটা দেখার পর আরেকটি ভিডিও’র সাজেশন এলো। ভিডিওটি হলো হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জীবনের ওপর একটি ইরানি চলচ্চিত্র।... ওটা দেখা শুরু করার পর প্রথম থেকেই ভালো লাগতে শুরু করলো। ওটা দেখার পর আমার মনে হলো, সিনেমাটি খুব ভালো লাগছেতো। তখন রাত প্রায় এক দেড়টা বাজে। বাসার সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমি একা আমার রুমে সিনেমা দেখছি। ওই সিনেমার ডায়ালগেই কুরআনের আয়াত ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু আয়াতের অর্থ এরকম ছিল যে ‘তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাও। তিনি তোমাদের মাফ করবেন।... এরকম কিছু কিছু কথা আমাকে টাচ করতে লাগলো।’
এ প্রসঙ্গে হ্যাপি আরো বলেন, ‘আর ওই সময়টা এমন ছিল যে, আমার জীবনের কিছু বিষয় নিয়ে আমি প্রচণ্ড আপসেট ছিলাম। আমার কাছে মনে হতো জীবনের কোনো মানে নেই। সবকিছু মিলিয়ে মানসিকভাবে দুর্বিষহ অবস্থায় ছিলাম।... আমি যখন ওই ইরানি মুভি দেখলাম তখন সেখানে ব্যবহৃত ডায়লগে কুরআনের এমন কিছু আয়াত শুনলাম যা আমি আগে কখনো শুনিনি। আমার জীবনে কুরআনের আয়াত শোনার এটাই প্রথম ঘটনা। কুরআনের প্রতিটি আয়াত আমার মনের ভেতর ঢুকে যাচ্ছিল।’ তারপর হযরত আদম (আ.) জীবনীর ওপর নির্মিত একটি ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনীর ওপর নির্মিত ‘দ্যা মেসেজ’ সিনেমাটি দেখেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেখার পর মনে হলো আমি এখন যেভাবে জীবন যাপন করছি এটা কেমন জীবন? এ মুহূর্তে যদি আমি মারা যাই তা হলে আমার কি হবে? তখন মনে হচ্ছিলো আমার নাক, কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। আমি প্রচণ্ড অস্থিরতা অনুভব করছিলাম। আমি যে বেপর্দাভাবে ঘুরছি।... এই যে আমি সিনেমা করছি। খারাপ জায়গায় আছি। আমি মরে গেলে এই খারাপ কাজগুলোর জন্যে আমার কী শাস্তি হবে? জীবনে আমি কত রকম গুনাহ করেছি, সেই গুনাহগুলো আমার ভাবনায় চলে এলো। এসব কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এবার আমাকে তওবা করতে হবে।’
তারপর তওবা করলেন হ্যাপি। নামাজ শিক্ষা থেকে কয়েকটা দোয়া মুখস্থ করে নামাজ পড়লেন। অবশ্য সুরা ফাতেহা ও ইখলাস আগেই পারতেন বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথম সেজদায় গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। অনেক শান্তি অনুভব করেছেন বলে জানান তিনি। তখনি সিদ্ধান্ত নেন সিনেমায় কাজ করবেন না। তখন একটি সিনেমার শুটিং চলছিল। ১২টি সিনেমার প্রস্তাব ছিল তার। তখনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘আজ থেকে আমি মিডিয়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন থেকে আর সিনেমাতে কাজ করব না।’ এতে নানা সমালোচনার সম্মুখীন হন। ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন। সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কুরআন, হাদিস ও ইসলামি বই পড়তে শুরু করেন। বোরকা পরেন। তালীমে যাওয়া শুরু করেন। তবে মুভি বা ভিডিও দেখে দ্বিন শিক্ষা সঠিক না জানিয়ে তিনি কুরআন, হাদিস পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে হ্যাপি জানান, অনেকের মতো তার এই বদলে যাওয়া মেনে নেয়নি পরিবার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার আম্মু আমাকে খুব টর্চার শুরু করলেন। বাসার সবাই তখন আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করত যে, আমি যেন এ বাসা থেকে বের হয়ে যাই।... এমনি তারা আমার গায়েও হাত তুলেছে। তারা আমার এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছিল না। ...পরিবারের কেউ আমাকে বুঝাতে এলে আমি তাদের বলতাম ‘আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন আমি সেটা শুনব। আল্লাহ আমাকে পর্দা করতে বলেছেন, পরপুরুষের সামনে যেতে নিষেধ করেছেন।... আমাকে মেরে ফেললেও আমি সিনেমায় যাব না।’ তারপর থেকে হ্যাপিকে দিয়ে ঘরের ফ্লোর পরিষ্কার থেকে বিভিন্ন কাজ করানো হতো শাস্তি হিসেবে। ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে যান হ্যাপি।
ধর্মীয় শিক্ষার জন্য একটি আবাসিক মহিলা মাদরাসায় ভর্তি হন। ক্ষুব্ধ মা-বাবা খোঁজ নেন না। একদিন মাকে দেখার জন্য বাসায় যান। টাকার অভাবে মিরপুর থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পৌঁছেন। মাদরাসার ২৮ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন হ্যাপি। সেই পোস্ট পড়ে এক যুবক মাদরাসায় গিয়ে শিক্ষকদের মাধ্যমে হ্যাপিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিয়মিত তাবলীগে যান। শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষকের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন হ্যাপি। স্বামীর প্রশংসা করে হ্যাপি বলেছেন, ‘তার মুখে আমার অতীতের একটা কথাও আজ পর্যন্ত শুনলাম না। তিনি শুধু তার স্ত্রী আমাতুল্লাহকেই চিনেন...।’ হ্যাপি জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তালিমের মাধ্যমে তার মাও নামাজ ও পর্দা শুরু করেছেন। হ্যাপি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আখিরাতের সবগুলো স্তর আমি যেন অনায়াসে পেরোতে পারি, এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’সূত্র : মানবজমিন

No comments

Social Icons

Featured Posts

Sample text

Sample Text

ad

ad

ad

http://livenewsbangladesh.blogspot.com/. Theme images by Bim. Powered by Blogger.